সবার মনে একই প্রশ্ন, মুন্সীগঞ্জে বাঘ এলো কোথা থেকে
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার ফুলকঁচি গ্রামের লোকালয়ে সম্প্রতি দুটি বাঘের উপস্থিতি চোখে পড়েছে স্থানীয়দের। এ ঘটনায় গ্রামবাসীদের মধ্যে যেমন বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তোলপাড় শুরু হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের লোকজনের মধ্যে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় সর্বপ্রথম দুটি বাঘের দেখা মেলে। এ সময় গ্রামের লোকজন সম্মিলিতভাবে বাঘ দুটিকে ধাওয়া করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে বাঘ দুটি জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে এলাবাসীর ধারণা ছিল, গ্রামে আর বাঘ নেই। কিন্তু শনিবারও বাঘ দুটি দেখতে পায় কয়েকজন। এ সময় বাঘের চারটি ছবিও তুলতে সক্ষম হন মোহাম্মদ শান্ত নামে স্থানীয় এক যুবক। যা বন বিভাগের মাধ্যমে ঢাকা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। এসব ছবি আবার মূহুর্তে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। এতেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, সন্ধ্যা নামতেই ফাঁকা হয়ে যায় বাজার, রাস্তাঘাট!
আরো পড়ুন: মুন্সীগঞ্জের লোকালয়ে বাঘ!
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কাবিরুল ইসলাম খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং গ্রামটিতে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া বাঘ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে গ্রামবাসীকে রাতে একা বের না হয়ে দলবদ্ধ হয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হয়।
আরো পড়ুন: বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বাংলাদেশ কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে?
এসব ঘটনায় গ্রামবাসীদের মধ্যে যেমন বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তেমনই তোলপাড় শুরু হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে। সবার মনে একই প্রশ্ন, মুন্সীগঞ্জে বাঘ এলো কোথা থেকে?
বাঘের উপস্থিতির বিষয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের হাতে আসা ছবি পাঠানো হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাঘ বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খানের কাছে। ছবি বিশ্লেষণ করে তিনি জানান, প্রকৃতপক্ষে এটি বাঘ নয়, মেছো বাঘ।
এসব ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ছবি: বন বিভাগের সৌজন্যে
ড. মনিরুল এইচ খান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এটা আসলে Fishing Cat (বৈজ্ঞানিক নাম Felis viverrina), বাংলায় যাকে বলা হয় মেছো বাঘ। এর স্বভাব অনেকটা বন বিড়ালের মতো তবে আকারে বন বিড়ালের চেয়ে বড়, প্রায় কুকরের কাছাকাছি। মেছোবাঘ বাংলাদেশের সর্বত্রই কমবেশি দেখা যায়। তবে জলাভূমি এলাকায় বেশি থাকে। এরা প্রধানত রাতে শিকার করে। মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, ইঁদুর, পাখি ইত্যাদি এদের প্রধান খাদ্য। তবে খাদ্য সংকটেই হয়তো এরা লোকালয়ে আসছে।”
আরো পড়ুন: গাজীপুর সাফারি পার্কে গুইসাপ খেয়ে বাঘের মৃত্যু
মনিরুল এইচ খান বলেন, “মেছো বাঘ নিয়ে মোটেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এরা মানুষকে আক্রমণ করে না। বড়জোর হাঁসমুরগী ধরতে পারে।”
এদিকে একই ছবি পাঠানো হয় বাংলাদেশ বন বিভাগের বন সংরক্ষক (অর্থ ও প্রশাসন) মিহির কুমার দো’কে। ছবি দেখে তিনিও প্রাণীটিকে মেছো বাঘ বলেই সনাক্ত করেন।
মিহির কুমার দো ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এটি মেছোবাঘ। মুন্সীগঞ্জে মেছোবাঘকেই বাঘ বলা হয়। তাই এলাকাবাসী মেছোবাঘ দেখেই তা বাঘ বলে প্রচার করেছে। তাতেই শুধু শুধু আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জে বাঘ থাকার কোনো সুযোগ নেই।”
আরো পড়ুন: সুন্দরবন থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মৃতদেহ উদ্ধার
এদিকে লৌহজং উপাজেলা নির্বাহী মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ইতোমধ্যে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ছবি দেখে তারা আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন এটি মেছোবাঘ। বন কর্মকর্তাদের বক্তব্য, ‘মেছোবাঘ আকৃতিতে সাধারণত কিছুটা ছোট হলেও এটি দেখতে বেশ বড় আকারের। তাই স্থানীয়রা একে চিতা বাঘ ভেবে ভুল করেছেন।’ তবে গ্রামের মানুষের মধ্যে বাঘের আতঙ্ক ছড়ানোয় সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয়দেরও চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।”
আরো পড়ুন: আজ বিশ্ব বাঘ দিবস, বাঘ সম্পর্কে জেনে নিন কয়েকটি তথ্য
মতামত দিন