প্রাকৃতিক ভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য এবার কুমিরের বাসায় ৮টি ডিম রাখা হয়েছে। আর বাকী ২৬টি কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফুটানোর জন্য ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। গত দুই বছর ইনকিউবেটরে রেখে জুলিয়েটের ডিম থেকে বাচ্চা না হওয়ায় এবার উভয় পন্থাই অবলম্বন করা হয়।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে মা কুমির ‘জুলিয়েট’ এবার ৩৪টি ডিম দিয়েছে।
১৮ মে, শনিবার সকাল ৯টার দিকে দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে ডিম পাড়তে শুরু করে জুলিয়েট। পরে ডিমগুলোর কয়েকটি পুকুর পাড়ে কুমিরের বাসায় রেখে বাকীগুলো সরিয়ে কেন্দ্রের ইনকিউবেটরে স্থানান্তর করা হয়।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মো. আজাদ কবির জানান,কুমির লালন-পালন কেন্দ্রে লোনা পানি প্রজাতির মা কুমির জুলিয়েট শনিবার সকাল ৯টার দিকে পুকুর পাড়ে তৈরিকৃত বাসায় ডিম দিতে শুরু করে। ঘন্টাখানেক সময়ের মধ্যে ৩৪টি ডিম দেয় জুলিয়েট। প্রাকৃতিক ভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য এবার কুমিরের বাসায় ৮টি ডিম রাখা হয়েছে। আর বাকী ২৬টি কৃত্রিম পদ্ধতিতে ফুটানোর জন্য ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। গত দুই বছর ইনকিউবেটরে রেখে জুলিয়েটের ডিম থেকে বাচ্চা না হওয়ায় এবার উভয় পন্থাই অবলম্বন করা হয়।
আজাদ কবির বলেন, “ডিম না ফোটার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন কুমির জুলিয়েটের পুরুষ জুটি রোমিও মোটা হয়ে প্রজজন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে গত বছরের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে একটি পুরুষ কুমির করমজলে আনা হয়। পরে রোমিওকে উপরে তুলে রেখে এতদিন জুলিয়েটের কাছে নতুন পুরুষ কুমিরটিকে রাখা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “এখন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রাকৃতিক ও সংরক্ষণকৃত এ ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। যেহেতু বিগত দুই বছর জুলিয়েটের ডিম থেকে একটিও বাচ্চা ফোটেনি তাই এবার প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে।”
এ নিয়ে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে জুলিয়েট ১৩ বার ডিম দিল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার করমজলের কুমির জুলিয়েট পরিবারে নতুন অতিথি আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।
বন বিভাগের সূত্রমতে, এক সময় বাংলাদেশে লবণ পানির, মিঠা পানির ও ঘড়িয়াল এই তিন প্রজাতির কুমিরের অস্তিত্ব ছিল। এর মধ্যে মিঠা পানির কুমির ও ঘড়িয়াল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধু লবণ পানির কুমিরই কোনো ভাবে টিকে আছে। তাই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির লোনা পানি প্রজাতির কুমির রক্ষায় পদক্ষেপ নেয় বন বিভাগ। কুমিরের প্রজনন, বৃদ্ধি ও তা সংরক্ষণে জন্য ২০০২ সালে সরকারি উদ্যোগে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র লোনাপানির কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি।
বন বিভাগের বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রটি। শুরুতে জেলেদের জালে ধরা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে নোনা পানি প্রজাতির দুটি স্ত্রী কুমির জুলিয়েট, পিলপিল ও একটি পুরুষ কুমির রোমিওসহ বড় ৬টি ও ২০০টি ছোট কুমির রয়েছে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া কুমিরগুলো ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক,বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, পটুয়াখালী বন বিভাগ ও সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে অবমুক্ত করা হয়।
মতামত দিন