উদ্ধার করার পর নীল গাইটিকে রাজশাহীর বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে রাখা হয়েছে
নওগাঁর মান্দা থেকে বিরল প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় একটি ‘নীল গাই’ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) একটি কৃষি জমির খেত থেকে বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণিটিকে ধাওয়া দিয়ে আটক করেন এলাকাবাসী। পরে স্থানীয় প্রশাসন খবর পেয়ে প্রাণিটিকে উদ্ধার করে রাজশাহী বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে হস্তান্তর করে। বর্তমানে নীল গাইটির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন এটির চিকিৎসকেরা।
উদ্ধার করার পর নীল গাইটিকে রাজশাহীর বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে আনা হয়েছে। বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রাজশাহীর পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, "উদ্ধার হওয়া ‘নীল গাই’ প্রকৃতি সংরক্ষণগারে রাখার পর থেকেই যত্ন করছেন বিভাগের কর্মচারীরা। প্রাণিটি মানুষজন দেখলেই ভয় পাচ্ছে। লাফালাফি করছে। প্রথমদিকে কিছুটা ক্ষত থাকলেও এখন মোটামুটি সুস্থ। তার চিকিৎসা এখনও চলছে। নীলগাই তৃণভোজি হওয়ায় তাকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে টমেটো, গাজর, শসা, কলা ও সবজি খাওয়ানো হচ্ছে"।
তিনি আরও জানান, "নীল গাই বিরল প্রজাতির বাংলাদেশে প্রাণি। এটি গাই হিসেবে পরিচিত হলেও এটি মোটেও গরু শ্রেণির নয়, বরং এটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় হরিণ বিশেষ প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘বোসেলাফাস ট্র্যাগোকামেলাস’। একশ’ বছর আগে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নীল গাই দেখা যেতো। এখন আর বাংলাদেশে নীল গাই পাওয়া যায় না। তবে প্রায় ১৯৪০ সালের দিকে পঞ্চগড়ে একবার নীল গাই দেখা গিয়েছিল। এরপরে বাংলাদেশে আর কোথাও নীল গাই দেখতে পাওয়া যায়নি।"
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঠাকুরগাঁওয়ে ভারতের বনাঞ্চল থেকে আসা একটি স্ত্রী ‘নীল গাই’ পাওয়া যায়। যেটি বর্তমানে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে রাখা হয়েছে। আর নওগাঁয় উদ্ধার হওয়া ৫ ফুট সাড়ে ৫ ইঞ্চি ধূসর রঙের নীল গাইটি হচ্ছে পুরুষ।
এ প্রসঙ্গে এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, "দিনাজপুর থেকে স্ত্রী নীল গাইটি নিয়ে এসে আবদ্ধ প্রজনন করানো গেলে প্রদর্শন ও বংশবৃদ্ধি একইসাথে ঘটবে। এর আগেও আমরা কেন্দ্রীয় উদ্যানে ঘড়িয়ালের আবদ্ধ পদ্ধতিতে প্রজনন করে সফল হয়েছি। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘও আমাদের এই আবদ্ধ পদ্ধতিতে প্রজনন প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিয়েছেন"।
এদিকে নীল গাইটিকে রাজশাহীতে আনার পর প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। এত লোকজন দেখতে আসার কারণেও ভয় পাচ্ছে প্রাণিটি। তবে দর্শনার্থীদের মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই নীল গাইয়ের সাথে সেলফি তুলছেন। অনেকেই বই-পুস্তুকে পড়া প্রাণিটিকে প্রথম দেখে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করছেন।
মতামত দিন