বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর এখনও নির্যাতন চলছে। তাদের অনেককেই দাস বানিয়ে রাখা হয়েছে। শোষণের হাত থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।
গত কয়েক দশক ধরেই মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির বাসিন্দারা। গত বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘গণহত্যা’ শুরুর পর রোহিঙ্গা প্রবেশের ঢল আরও বেড়ে যায়। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে কমপক্ষে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা।
এখনও থেমে নেই রোহিঙ্গা প্রবেশ। থেমে থেমে এখনও বাংলাদেশে আসছে জনগোষ্ঠীটির বাসিন্দারা। জানা গেছে, বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে আরও পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা।
সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর এখনও নির্যাতন চলছে। তাদের অনেককেই দাস বানিয়ে রাখা হয়েছে। শোষণের হাত থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান আবদুল মতলব বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের একপ্রকার বন্দি করে রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী। তাদের স্থানীয় বাজারগুলোতেও যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ওই রোহিঙ্গারা খাবার সংকটে ভুগছে। তাদের ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।
মতলব আরও জানান, এখন মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর কৌশলগতভাবে নির্যাতন করছে। এর ফলে তাদের ওপর নৃশংসতার ঘটনাগুলো সামনে আসছে না। এমন চলতে থাকলে রাখাইনের সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে।
চলতি বছরে বাংলাদেশে ১৩ হাজার ৭৬৪ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। তাদের মধ্যে সেপ্টেম্বরে এদেশে এসেছে ৫৩১ জন। এর আগে আগস্টে ২৫৬ জন ও জুলাইয়ে ৪১৩ জন বাংলাদেশে এসেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম সূত্রে জানা যায়, পালিয়ে আসার এসব রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই প্রবেশ করেছে টেকনাফের সাবরাং ও এর আশপাশের এলাকা দিয়ে।
এই প্রবেশ রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাবোঝাই দুটি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।
টেকনাফ-২ বিজিবির ডেপুটি কমান্ডার মেজর শরিফুল ইসলাম জুম্মাদার বলেন, ‘এখনও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এটা ঠেকাতে বিজিবি নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।’
মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা এখন কেমন আছে জানিয়েছেন সম্প্রতি দেশটির বুথিডং থেকে পালিয়ে আসা খাদিজাতুল কোবরা (২৬)। তিনি বলেন, সেখানে রোহিঙ্গা নারীদের মারধর করে সেনাসদস্যরা। আর তাদের স্বামীদের চাকর হিসেবে ব্যবহার করছে। দিনের বেলায় রোহিঙ্গাদের পুরুষদের দিয়ে বাসার কাজ করানো হয়। রাতে তাদের সেনা সদস্যদের পাহারার কাজে লাগানো হয়।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আরেক রোহিঙ্গা আবুল হায়দার। বাংলাদেশে আসার জন্য তিনি তার মেয়ের স্বর্ণের কানের দুল ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ৮০০ বাড়ি ছিল। কিন্তু এখন ৫০০টি অবশিষ্ট আছে।’
এ বিষয়ে টেকনাফ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মনির বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে অবস্থানরত তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদের এখানের ভালো অবস্থার কথা জানাচ্ছে এবং বাংলাদেশে আসার জন্য বলছে। এতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়ে যাচ্ছে।
আবদুল্লাহ মনিরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল হাসান জানান, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মতামত দিন