নিহত আকবর হোসেন বাকপ্রতিবন্ধী ছিলেন। শুনতে পেলেও কথা বলতে পারতেন না আকবর। শুধু মা বলে ডাকতে পারতেন।
মাত্র ৫০০ টাকার একটি মোবাইল ফোনের জন্যই খুন করা হয়েছিল বাকপ্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আকবর হোসেনকে। ঢাকার তুরাগে সারাদিন ভিক্ষা করে বাড়ি ফেরার পথে ২০১৭ সালের বিশ্ব এজতেমা চলাকালীন সময়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেফতার হওয়া তিন আসামি এসব কথা জানিয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়েছে।
পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায় গত বছর ২১ জানুয়ারি করার জন্য বাড়ি থেকে বের হন আকবর। পরে তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। পরবর্তীতে, একটি মৎস্য খামারের ড্রেন থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হলে তার বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
তুরাগ থানার উপপরিদর্শক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত আকবর হোসেন বাকপ্রতিবন্ধী ছিলেন। শুনতে পেলেও কথা বলতে পারতেন না আকবর। শুধু মা বলে ডাকতে পারতেন। বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় তার হাতে পুরানো একটি মোবাইল ফোন ছিল। মোবাইলটিতে কোনও সিম ছিল না। মেমোরি কার্ড দিয়ে গান শোনার জন্যই মোবাইলটি সঙ্গে রাখতেন আকবর মূলত এই মবাইলের জন্যই তাঁকে হত্যা করা হয়’।
উল্লেখ্য, বাড়িতে না ফেরায় আকবরকে খুঁজতে থাকেন তার বাবা। এক পর্যায়ে ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা তুরাগ থানার পাকুরিয়া গ্রামের ১৫ নম্বর সেক্টরের এ/১ ব্লকের দক্ষিণ পাশে সামসুল হকের মৎস্য খামারের পশ্চিমে রাজউকের পানির ড্রেনের নিচে একটা হাত দেখতে পেলে সেখানে ছুটে গিয়ে হাত দেখেই নিজের ছেলের লাশ সনাক্ত করেন মোহাম্মদ আলী।
তদন্ত সম্পর্কে জানাতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা শহীদু্ল ইসলাম বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ওই মৎস্য খামারে যারা আড্ডা দিতো তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। ওই তালিকার কয়েকজনকে ঘটনার পর থেকে সেখানে আর যেতে দেখা যায়নি’।
পরে এই তালিকা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিল্লাল(২১) নামে এক যুবককে গেফতার করে পুলিশ। তারপর বিল্লালের জবানবন্দি এবং স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় ঘটনায় জড়িত বাকি ২ জন কেও। পরে আকবরের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়। মামলায় অভিযুক্ত তিন আসামির বাড়িই তুরাগ থানার পাকুরিয়া গ্রামে।
জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের বর্ণনায় বিল্লাল হোসেন বলে, ‘আকবর মৎস্য খামারের কাছে আসার পর তার মোবাইলটি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করি আমরা। হত্যার পর তার লাশ গুম করতে ঘটনাস্থলের পাশেই ড্রেনের সাইডে ফেলে বালুর বস্তা দিয়ে লাশ ঢেকে রাখি। এরপর আকবরের টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যাই’।
অন্য আসামি হাসু বলে, ‘মোবাইলটি ওই রাতেই ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে তাৎক্ষণিক নগদ ৪০০ টাকা পাই। রাতে তিনজন মিলে মাদক সেবন করি। এরপর যে যার মত করে বাড়িতে চলে যাই’।
এদিকে, নিহতের বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এতো দিন জানতাম, বোবার কোনও শত্রু হয় না, কিন্তু আমার বোবা ছেলেরে তারা মেরে ফেলল’। তিনি এসময় তার ছেলে হত্যার দ্রুত বিচারও দাবী করেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।
মতামত দিন