যেভাবে রোহিঙ্গারা পাচ্ছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট। ঢাকা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দ্বিতীয় খণ্ড রইলো আজ।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাসিন্দারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। বাংলাদেশে তাদের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে গেল কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশে আশ্রয়ই নেয়নি, বরং তাদের অনেকেই জড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন অপরাধ ও আইনবিরোধী কাজে। অনেকে অবৈধভাবে জোগাড় করেছে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র। অনেকেই আবার বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন বিদেশে। ঢাকা ট্রিবিউনের অনুসন্ধান বছরে বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কমবেশি আড়াই লাখ।
রোহিঙ্গারা অবশ্যই বাংলাদেশি পাসপোর্ট জোগাড় করে অবৈধভাবে। কিন্তু উপায়টা কী? তাদেরকে এ কাজে সহায়তা করছেন বাংলাদেশের বাসিন্দা ও অনেক সরকারি কর্মকর্তা। ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই কিছু তথ্য।
কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের একজন দালাল সুলতান আহমেদ (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, আমরা রোহিঙ্গাদের সমবয়সের স্থানীয় বাংলাদেশিদের আসল জাতীয় পরিচয়পত্র জোগাড় করি। এরপর ওই পরিচয়পত্র দেখিয়ে দূরবর্তী কোনো ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে জন্মসনদ জোগাড় করি। ইউপি চেয়ারম্যান এটা ধরতে পারেন না। কারণ আমাদের কাগজপত্র আসল থাকে। পরে আমরা বাংলাদেশিদের ছবি, পরিচয়পত্র ও জন্মসনদ দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করি।’
সুলতান আরও বলেন, ‘আমাদের ক্লায়েন্টরা শুধু বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবির জন্য পাসপোর্ট অফিসে যান। সেখানে যেহেতু আমাদের ভালো যোগাযোগ রয়েছে, তাই কয়েকজন কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমাদের সাহায্য করেন। তবে সমস্যা হয় যখন কোনো সিনিয়র কর্মকর্তা আবেদনকারীদের যাচাই করে দেখেন এবং খোঁজখবর নেন। এক্ষেত্রে অবৈধ আবেদনকারীরা ধরা পড়েন, না হলে না’
রোহিঙ্গাদের অবৈধ পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়ার জন্য ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন এই দালাল।
সোহেল নামের আরেকজন দালাল ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আগে অ-বাংলাদেশিদের জন্য পাসপোর্ট তৈরি খুবই সহজ ছিল। কিন্তু এখন কঠিন নিয়মের কারণে তা এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে পাসপোর্ট বানানোর খরচ বেড়ে গেছে।’
অবৈধভাবে পাসপোর্ট করতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন তায়েবা ও সিয়নারা নামের রোহিঙ্গা দুই নারী। তারা স্বীকার করেন স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষক তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেন। শুধু তাই না তিনি আরও ১০ জনকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জন্মসনদ দিয়েছিলেন।
ওই দুই নারী জানান, জন্মসনদের পাশাপাশি জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট বানাতে একটি গ্রুপের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন তারা। এমন কয়েকটি গ্রুপ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় রয়েছে।
ঢাকা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে অবৈধ জন্মসনদ বানাতে তায়েবা ও সিয়নারা নামের দুই বাংলাদেশি নারীর জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
শুধু এই দুই নারীই নয় কক্সবাজারের অনেক রোহিঙ্গাই এভাবে বানাচ্ছেন পাসপোর্ট। পাড়ি দিচ্ছেন বিদেশে। এসব অবৈধ কাজে সাহায্য করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে ওঠাবসা থাকায় আইনের ফাঁক গলিয়ে অপরাধ করেই যাচ্ছেন তারা। করছেন দেশের সঙ্গে প্রতারণা।
মতামত দিন