এই পর্যন্ত প্রায় ২৪ থেকে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে এলপি গ্যাস ও চুলা দেয়া হয়েছে।
চলতি মাসের ২৫ তারিখেই রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এই এক বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কমে এসেছে লাকড়ির ব্যবহার। জ্বালানী হিবাবে লাকড়ির পরিবর্তে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার সরবরাহ করা হচ্ছে।
বনভুমিতে সবুজ বেষ্টুনি, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ধ্বংস করে গড়ে উঠে রোহিঙ্গাদের বসতি। পাহাড়ের পর পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বিশেষ করে এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের রান্নার জ্বালানী হিসাবে লাকড়ির যোগান দিতে পার্শ্ববর্তী বনভুমিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলা হয়। কিন্তু, প্রায় এক বছরের মাথায় ধীরে ধীরে জ্বালানিতে পরিবর্তন আনে সরকার। বর্তমানে রোহিঙ্গারা কাঠ নয় গ্যাস ব্যবহার করছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রান্নার কাজে ব্যবহার হচ্ছে এলপি গ্যাস।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের দেয়া তথ্য মতে, উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের রান্নার জ্বালানি হিসাবে প্রতিদিন ব্যবহার করতো প্রায় ১০ হাজার টন কাঠ। যার বেশীরভাগই আসতো উখিয়া-টেকনাফের সামাজিক বনায়ন উজাড় করে। এসব রোহিঙ্গারা সংরক্ষিত বনভূমির উপর ১ লাখ ৬৫ হাজার ঝুপড়ি নির্মাণ করে আশ্রয় নিয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ বনভূমি উজাড় হওয়ায় ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকার সমপরিমাণ জীববৈচিত্র্য ও বনসম্পদের ক্ষতি হয়েছে।
এই ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে সরকারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও এনজিও জ্বালানির বিকল্প হিসাবে গ্যাসের চুলা ব্যবহারে পরামর্শ দেয়। বেশ কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গাদের জালানি হিসেবে এলপি গ্যাস দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে এসব এলপি গ্যাস ও চুলা দেয়া হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গারা যেমন খুশি তেমনি কমেছে জালানি কাঠের চাহিদা। চাহিদা না থাকায় অনেকটা কমেছে বন উজাড়।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লালু মাঝি, ফয়েজ মাঝি ও কুতুপালং ক্যাম্পের মোক্তার মাঝি সহ অনেকে জানিয়েছেন, ‘আগে রান্নার জন্য আমরা গাছ কর্তন করতাম। কিন্তু এখন আর করা লাগে না। কারণ আমাদেরকে এখন গ্যাস দেয়া হচ্ছে’।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণ হচ্ছে এলপি গ্যাস
কক্সবাজার সিভির সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘গত ১২ মাসে রোহিঙ্গা শিবিরে আমুল পরিবর্তন এনেছে সরকার। যার মধ্যে অন্যতম জালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করা। হয়তো আগামীতেও ভাল সুফল পাবে সরকার। যদিও একটু ঝুকি রয়েছে। কারণ রোহিঙ্গাদের অনেকে গ্যাস ব্যবহার করতে জানে না। তাদের এবিষয়ে পরামর্শ দেয়া প্রয়োজন’।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিকারুজ্জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে এই পর্যন্ত প্রায় ২৪ থেকে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে এলপি গ্যাস ও চুলা দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত ২৭শ’ বাংলাদেশী পরিবারকে এ গ্যাস প্রদান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে সামনে নতুন প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। যাতে সকল রোহিঙ্গা পরিবার এ গ্যাসের সুবিধা পায়’।
মতামত দিন